রথের মেলা
আবার ফিরে এলো রথের মেলা, পুরনো কিছু স্মৃতি চোখের সামনে আবার ভেসে ওঠল। পুরনো হলেও কিছু কিছু স্মৃতি নতুনের মতো থেকে যায়, সারা জীবনের মতো প্রতিটি চলার পথে মনে পড়ে যায়। রথের মেলার ঠিক এমন কিছু স্মৃতি আজও আমার মনকে ছুঁয়ে যায়,আমি আর আমার প্রেমিক দুজনে মিলে সেদিন গোটা দিনটা একসঙ্গে থাকা,ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া দাওযা, করার প্ল্যান করেছিলাম, সারাদিন দুজনে একসাথে থাকব।রথের দিনে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে, অল্প কিছু মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম ।এদিকে ও আমার জন্য 10 টা থেকে অপেক্ষা করছে, অবশেষে আমি 10:30 টায় ওর সাথে দেখা করলাম। 30 মিনিট আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল, আমি ভাবলাম রেগে গেছে হয়তো, তারপর দেখলাম না ও রাগ করে নি তো। ও ব্যাপারটাকে বুঝলো রাস্তায় বের হলে দেরি তো হবেই, রোডে গাড়ির কত জ্যাম থাকে তাতেই দেরি হয়েছে, ও বলল তুমি তো কখনো দেরি করো না আমি বুঝতে পেরেছি। আমরা যাবো টেকনো পলিশের এর রথের মেলায়। আমি ওকে বললাম মেলায় বিকেলের পরে গেলে মেলায় ঘুরতে খুব ভালো লাগবে,তার কারণ ওখানে রথটা ও বের হবে সন্ধ্যের পরে তাই ভাবলাম বিকেলের পরে গেলে দেখতে ভালো লাগবে ঘুরতেও ভালো লাগবে। রথ আর মেলা দুটোই ঘুরতে আর দেখতে খুব ভালো লাগবে।এরপর আমরা ওখান থেকে বাসে উঠলাম, নামলাম আমাদের মেট্রো যেখানে আমরা মাঝে মাঝে দেখা করতে হলে মেট্রোতে চলে আসতাম। মেট্রোতে পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল, মেট্রোতে পৌঁছায়ে কিছুক্ষণ বসে ওখানে বিশ্রাম করলাম,এরপর দুজনে খাওয়া দাওয়া করলাম, বাইরে খাবার আমরা দুজনে মোটেই খেতে পারতাম না বলে, তাই আমরা যখন দেখা করতাম। আমি বাড়ির থেকে টিফিন তৈরী করে নিয়ে আসতাম,সেদিন ও আমি লু চি আর আলুর দম নিজের হাতে বানিয়ে নিয়ে এসেছিলাম আর ওর প্রিয় মিষ্টি রসগোল্লা যেটা ও খেতে খুব ভালোবাসে সেটাও নিয়
এসেছিলাম। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, আমরা ওখান থেকে বিকেলের পরে বার হলাম। তারপর বাসে করে আমরা গেলাম টেকনো পলিশের তখন বাজে সাড়ে পাঁচটা। অবশেষে আমরা টেকনো পলিশ এর রথের মেলায় এসে পৌছালাম। সেই সময় পুজো শেষ হলো সবে, রথকে নিয়ে সবাই রাস্তায় বের হলো। আমরা দুজনে একটা সাইটে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। রথটা খুবই বড়োছিল, আর খুব সুন্দর করে সাজিয়ে ছিল, নানা রঙের ফুল,নানা রঙের লাইট,
জগন্নাথ ঠাকুর কে ও খুব সুন্দর লাগছিল। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে ছিল রথটাকে,সেখানে আমরা দুজনে কিছু ছবি তুললাম। রথের চারপাশে কত লোক ,বাচ্চারা, বড়োরা সবাই মিলে মিলে কত মজা করছে,কত হইচই করছে, রথের উৎসব আনন্দে ভরে উঠেছে। মন্দিরের পাশের মাঠে এক বিশাল বড় মেলা বসেছে, রথ উপলক্ষ করে রথের মেলা। সেই মেলাতে কত লোক, কত ভীড় ,বাচ্চারা ,বড়োরা, মেয়েরা, ছেলেরা, বয়স্ক মহিলারা, লোকেরা সবাই এসেছে মেলা বেড়াতে। আসে পাশের বাড়িতে আর কেউ নেই, আমরাও গেলাম মেলায়, কত রকমের দোকান , একদিকে পুচকার দোকান, আরেকদিকে মিষ্টি, মিষ্টির মধ্যে আরো কত কি , গরম গরম জিলিপি, গজা অন্যদিকে চাওমিন, এগ রোল ,মোগলাই আরো কত কি। ঘুগনি, ঝাল মুড়ি, বাদাম, ভুট্টারখই, আইসক্রীম খাবার দোকানের ছড়াছড়ি। আরেক দিকে বাচ্চা,বড়ো সবার জন্য চড়বার জিনিস কারেন্টের দোলনা, ট্রেন, আরো কত কি। আমরা দুজনে ফুচকা খেলাম, আমার পছন্দের আইসক্রিম খেলাম, মেলা সবে ভরে উঠেছিল ।হঠাৎ দেখি বৃষ্টি পড়তে শুরু হলো,তাড়াতাড়ি করে ছাতা খুললাম বৃষ্টিটা খুবই জোরে এসেছে,ছাতা যদি না থাকতো তাহলে হয়তো ভিজে যেতাম। বৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছোটাছুটি করতে লাগলো এদিকে ওদিকে যেদিকে পাচ্ছে সে দিকে গিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। যাতে ভিজে না যায়, তখন বাজে সাড়ে সাতটা তখন মেলায় আর কেউ নেই,বৃষ্টি ও হয়েছে ভীষণ জোরে।
বৃষ্টি থামল পুরো মেলা কাদা আর জলে ভরে গেল, এত সুন্দর মেলা বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল। কিন্তু আমরা দুজনে একটা ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে,আমরা দুজনেই ভিজে গিয়েছিলাম। টানা 1 ঘন্টা বৃষ্টির মধ্যে একটি ছাতায় দাঁড়িয়, সেই ভালোবাসার কথা, সেই অনুভূতির কথা, সেই জীবনের কিছু সময়ের কথা, আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আবার একটু একটু বৃষ্টি পড়তে শুরু করল, অনেক রাত ও হলো,বাড়ি ফিরতে হবে বাজে তখন 9:00। মেলা থেকে বেরিয়ে আসার সময় আবার একটি আইসক্রিম নিলাম আর মায়ের জন্য মেলার বাদাম নিলাম। আইসক্রিম খেতে খেতে বাসের জন্য এসে দাঁড়ালাম ,বৃষ্টি ও পড়ছে, রাস্তায় জল ও জমে গেছে, রাস্তাটা পার হয়ে বাসের জন্য এসে দাঁড়ালাম।
30 মিনিট পর বাস পেলাম আমরা দুজনে উঠে গেলাম, রাত ও অনেক হয়েছে, আমাকে বাড়ি ছেড়ে তারপর ও বাড়ি গেছে। বৃষ্টি এসে মেলার ক্ষতি হলো, কিন্তু আমাদের দুজনের ভালোবাসাটা আরো গভীর হলো।
কিন্তু এ বছরে রথের সময় কোন বৃষ্টি হলো না, তার কারণ আমরা দুজন সঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু এটা আমার বিশ্বাস, আমরা দুজন মিলবো খুব তাড়াতাড়ি । হে ভগবান আমাদের প্রার্থনা শুনে নাও , আমাদের দুজনকে সারা জীবনের জন্য মিলিয়ে দাও।
Very nice story
ReplyDelete